চাঁদায় চলে অবৈধ টিকটিকি, অনুমতি দেয় ট্রাফিক পুলিশ

Yasin Hoque    |    ০১:৫২ পিএম, ২০২০-১১-১০


চাঁদায় চলে অবৈধ টিকটিকি, অনুমতি দেয় ট্রাফিক পুলিশ

ইয়াছিন হক: চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে মিডিয়ায় বেশ আলোচনা সমালোচনা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভির যোগদানের পরে ট্রাফিক পুলিশের এই তুকমা মুছতে সততা সচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় নিছে এসেছে নগর ট্রাফিক পুলিশকে। ইতিমধ্যে ট্রাফিক পুলিশকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।বেশ কয়েকটি স্থানে বন্ধ হয়েছে সড়কের চাঁদাবাজী। কিন্তু অভিযোগ যেন কতিপয় ট্রাফিক পুলিশের পিছু ছাড়ছেনা। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সিএমপি কমিশনার। অথচ আরটিসির সভা থেকে পাস হওয়া রুট পারমিটও মানতে নারাজ খোদ সিএমপির ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন শহর ও যানবাহন পরিদর্শকরা।

নগরীর অক্সিজেন- আতুরারদিপো- মুরাদপুর-চকবাজার-গনি বেকারী- কাজীর দেউড়ি- টাইগারপাস- দেওয়ানহাট- চৌমুহনি হয়ে বারেক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত চলাচলের জন্য আরটিসি অটোটেম্পুর ১ নং রুটের অনুমোদন দেয়। তবে আরটিসির এই সিদ্ধান্ত না মেনে অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ অটোটেম্পো।রয়েছে অপরিপক্ষ চালক, অর্ধেকের বেশি চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অনুমোদনহীন এই রুটে অবৈধভাবে চলছে পারমিট ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি।সেইসঙ্গে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামায় তৈরি হচ্ছে যানজট ও জনজট। পাল্লা দিয়ে চলে বেপরোয়া এই যান, রয়েছে দুর্ঘটনার আশংখা।গাড়ি প্রতি দিতে হয় মাসিক চাঁদা, যানবাহন মালিকদের অভিযোগের তীর ট্রাফিক পুলিশের বায়েজিদ জোনের টিআই মো. শহীদের দিকে।  

অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক প্রশাসনের নামে মাসে দুই হাজার টাকার চাঁদা দিলেই নগরীর ১ নম্বর রুটে অবৈধ গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয় সংশ্লিষ্ট টি আই। লাইনভুক্তির জন্য এককালীন দিতে হয় ২ হাজার টাকা আর  প্রতি মাসে ট্রাফিক পুলিশ থেকে নিতে হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার মাসিক টোকেন।বর্তমানে এই রুটে চলাচল করছে ৬০ টি টিকটিকি (সবুজ টেম্পো)। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি হয়ে থাকে এই রুটে। এভাবেই মেয়াদউত্তীর্ণ লক্কর ঝক্কর ফিটনেসবিহীন অবৈধ অটোটেম্পো গুলোকে বৈধতা দেওয়া হয়।   

আরো পড়ুন>>> ঘুষ ছাড়া মিলেনা ইকুরিয়া বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স

বাংলাদেশ সড়ক  পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী তিন চাকার অটোটেম্পো গুলোতে চালকসহ ছয় জন যাত্রী বহনের পারমিট দেয়া হয়েছিল। তবে এই গাড়ি গুলোতে  ১২-১৪ জন যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।এইসব যানবাহনে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ যাত্রীরা। তবে আইন অমান্যকারী এসব চালক/মালিকদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না ট্রাফিক পুলিশ। 

চট্টমেট্রো আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) সূত্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নগরীর ১ নম্বর রুটে অটোটেম্পোর নির্ধারিত সিলিং রয়েছে ২৬২ টি যার মধ্য আরটিসি কর্তৃক অনুমোদিত রয়েছে ২৬১টি যান চলাচলের, সিলিং খালি রয়েছে একটি।যার মধ্যে অধিকাংশ গাড়ির রাস্তায় চলাচলের উপযুক্ত ছিলনা। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তৎপরতায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের সংখ্যা কমে বর্তমানে এই রুটে ৬০ টি টিকটিকি (সবুজ টেম্পো) চলছে। 

আরো পড়ুন>>> দুর্নীতিবাজ সানাউল হক ও মামুনের হাতে সিলেট বিআরটিএর স্টিয়ারিং

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গাড়ির মালিক এই রুটে অটোটেম্পু চলাচলের জন্য পুলিশকে সাপ্তাহিক ও মান্থলি চাঁদা দেয়ার বিষয়টি স্বিকার করে বলেন, এই রুটটি আগে নিয়ন্ত্রন করতো শ্রমিক নেতা আজাদ তবে করোনা প্রাদুর্ভাবের কিছু দিন আগ থেকে বন্ধ হয়ে যায় তাদের কার্যক্রম। করোনারকালের পর গনপরিবহন ফের চালু হলে এই রুটে চলাচলরত ৬০ টি গাড়ির মধ্যে সবগুলোই চলে অক্সিজেনের শহর ও যানবাহন পরিদর্শক মো. শহীদের ইশারায়।

আরো পড়ুন>>> পুলিশের নিরবতায় বেপরোয়া মইজ্জারটেকের অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা

পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করে চলাচল করা যানের বিরুদ্ধে সড়ক  আইনের ৭৭ নং ধারায় ব্যবস্থা ও ৩ মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদানের আইন  থাকলেও এই এলাকার দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের স্বচ্ছ পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বায়েজিদ জোনের শহর ও যানবাহন পরিদর্শক মোঃ শহীদ প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, রুট পারমিট,ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে আমরা প্রতিনিয়ত তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। তাছাড়া আরটিসি কর্তৃক নির্ধারিত রুট কমপ্লিট করার বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।তবে পুলিশের নামে মাসে ২ হাজার টাকার টোকেন বাণিজ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি।